রোযার ফজিলত ও গুরুত্ব।Virtues and importance of the month of Ramadan 2025.
রমজান মাসের ফজিলত:
- আরবী বছরের নবম মাস হল রমজান মাস। পবিত্র রোজা রাখার কারনে এ মাসে এত অধিক গুনাহ মাফ হয়, যা অন্য কোন মাসে হয় না। এ মাসের প্রতিটি মূহূর্তই ফযীলতপূর্ণ। হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় রমজান মাসে রোজা রাখে, সে ব্যক্তি গুনাহ হতে এমন নিষ্পাপ হয়ে যায়, যেমন মাতৃগর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ হবার দিন নিষ্পাপ ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, রোযাদারের জন্য সমুদয় পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ, ফেরেশতা মন্ডলী, তরু-লতা এবং পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী মাগফিরাত কামনা করে। নবী করীম (সাঃ) আরও বলেন, যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহকে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শিকল দ্বারা আটক করা হয়। হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেছেন 'রোযা আমার জন্যই এবং স্বয়ং আমিই এর প্রতিদান দেব'। নবী করীম (সাঃ) আরও বলেন, জান্নাতে 'রায়্যান' নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সুধু সাওম পালনকারীরা প্রবেশ করবে। রমজান মাসের এবাদত বন্দেগীতে অন্নান্য মাসের এবাদত বন্দেগী অপেক্ষায় ৭০ গুণ সওয়াব বেশী পাওয়া যায়।
সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। যা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম একটি। রোজা রাখার অসংখ্য ফজিলত কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এখানে ১৫টি ফজিলত তুলে ধরা হলো-
১. রোজার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নিজে দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, বান্দা একমাত্র আমার জন্য তার পানাহার ও কামাচার বর্জন করে । রোজা আমার জন্যই, আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব । (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৪)
২. আল্লাহ তাআলা নিজের ওপর অবধারিত করে নিয়েছেন, যে ব্যক্তি তাঁর সন্তুষ্টির জন্য গ্রীষ্মকালে (রোজার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন (কেয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন। (মুসনাদে বাযযার, হাদিস : ১০৩৯)

৩. কেয়ামতের দিন রোজাদারদের জন্য একটি বিশেষ পানির হাউজ থাকবে, যেখানে রোজাদার ব্যতিত অন্য কারো আগমন ঘটবে না। (মুসনাদে বাযযার, হাদিস : ৮১১৫)
৪. যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় একদিন রোজা রাখবে, পরে তার মৃত্যু হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৩২৪)
৫. জান্নাতে একটি স্পেশাল ফটক রয়েছে। যার নাম রাইয়ান। সেই গেইট দিয়ে কেবল রোজাদারগণই প্রবেশ করতে পারবে । (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৬)
৬. রোজাদারগণ রাইয়ান নামক গেইট দিয়ে প্রবেশ করে জান্নাতের পানীয় পান করবে। তারপর থেকে আর কখনো তাঁরা পিপাসার্ত হবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৬৫)
৭. রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল। আল্লাহ তাআলা বলেন, রোজা হলো ঢাল। বান্দা এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৪৬৬৯)
৮. রোজা কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব! আমি তাকে খাদ্য ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, অতঃপর তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৬২৬)
৯. ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখলে পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারি, হাদিস : ৩৮)
১০. ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখলে ও তারাবি পড়লে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেদিন সে মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। (নাসাঈ, হাদিস : ২৫১৮)
১১. রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধময়। (বুখারি, হাদিস : ১৯০৪)
১২. রোজাদারের জন্য স্পেশাল দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে; এক. যখন সে ইফতার করে তখন ইফতারের কারণে আনন্দ পায়। দুই. যখন সে তার রবের সাথে মিলিত হবে তখন তার রোজার (পুরস্কার লাভের) কারণে আনন্দিত হবে। (বুখারি, হাদিস : ১৯০৪)
১৩. রোজাদারগণ পরকালে সিদ্দীকীন ও শহীদগণের দলভুক্ত হবে। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩৪২৯)
১৪. ইফতারের সময় রোজাদার যদি দুআ করে, তাহলে তার দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না। (অর্থাৎ তার দুআ কবুল হয়)। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৫৩)
১৫. রোজা অন্তরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩০৭০)

রোজার বর্ণনা:
- ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে রমজান মাসের রোজা ইসলামের তৃতীয় রুকন।
- পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে- 'হে মুমীন বান্দাগণ ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেদের উপর ফরয করা হয়েছিল, যেন তোমরা প্রকৃত পরহেজগার হতে পার।'
- রোযা মানুষকে পাপ কাজ হতে বিরত রাখে।
- রোযার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
- রোযাদারের মন পবিত্র থাকে এবং তাতে পুরোমাত্রায় আল্লাহর যিকির ধ্বনিত হতে থাকে।
- রোযাদারের রুজি আল্লাহ বৃদ্ধি করে দেন।
- রোযাদার ব্যক্তির প্রার্থনা অবশ্যই কবুল করা হয়।
- রোযাদারের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং রোযাদারের খাওয়া-দাওয়া, কাজ-কর্ম সবকিছুই এবাদতের মধ্যে পরিগণিত হয়।
- আসমান-যমীনের সমস্ত ফেরেস্তা রোযাদারের জন্য দোয়া করে।
- রোযাদারের জন্য প্রত্যেক দিন নতুন করে বেহেশতকে সজ্জিত করা হয়।
- রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের গন্ধের চাইতেও অধিক প্রিয়।
- রোযাদারের দেহ পাপ হতে সম্পূর্ণ পবিত্র থাকে এবং কোন পাপ তাকে স্পর্শ করতে পারে না।
- রোযাদারের নেক আমল ও এবাদত বন্দেগীর পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়।
- রোযাদারের প্রতি আল্লাহর রহমতের পরিমাণ অত্যাধিক বৃদ্ধি পায়।
পোস্টে শুধুমাত্র মূল উক্তি টুকু সাজিয়ে লেখা হয়েছে , এই পোস্টটি যদি আপনার একটুও কাজে লাগে, তাহলে সুন্দর একটি কমেন্ট করে আপনার মতামত জানান !